ধূমপান ও মাদকদ্রব্য সেবনের কুফল সম্পর্কে পূর্ববর্তী পাঠে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য বিষয়টি সম্পর্কে শুধুমাত্র জানাই যথেষ্ট নয়। মানুষের জীবনের জন্য ক্ষতিকর এমন মারাত্মক অভ্যাসটি যাতে ত্যাগ করা যায় সেজন্য এখনই সে বিষয়ে বাস্তব কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রথমই দরকার কোনো অবস্থাতেই ধূমপানসহ অন্য কোনো মাদকদ্রব্য গ্রহণ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। কারণ কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে অজানা বিষয়ের প্রতি প্রচণ্ড কৌতূহল থাকে। এই কৌতূহল ও উত্তেজনাবশে কিংবা বন্ধুবান্ধবসহ কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা ধূমপান বা মাদক সেবন করতে পারে। এই কৌতূহল বা উত্তেজনা সারা জীবনের জন্য তার অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই কৌতূহল মিটাবার পূর্বে ঐ কিশোর বা কিশোরীকে ভাবতে হবে ধূমপান বা মাদক সেবনের ফলে কী কী কুফল দেখা দেবে এবং এই কুফলসমূহ বিবেচনা করলে তার মাদক সেবন করা উচিত হবে কি না। ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকতে হলে নিচের ধারাবাহিক কার্যক্রমগুলো অনুসরণ করতে হবে। যেমন-
১। ধূমপান ও মাদক সেবনের ফলে কী অবস্থা হয়, প্রথমে তা মনে মনে ভাবতে হবে।
২। ধূমপান বা মাদক সেবনের ফলে মা-বাবা, ভাই-বোন বা অভিভাবক এক অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়বেন, লজ্জিত হবেন। শিক্ষকেরা বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করবেন না। এ অবস্থা যাতে না হয় সেজন্য ভাবতে ও বিবেচনা করতে হবে।
৩। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মনস্থির করবে। ধূমপান বা মাদক সেবন না করার বিষয়ে প্রথমেই দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে পারলে এই সর্বনাশা কাজ থেকে বিরত থাকা যায় ।
৪। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রথমে পরিস্থিতি, সমস্যা, বিপদ চিহ্নিত করে এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে
হবে। এই তথ্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা অন্য কোনো সূত্রে সংগ্রহ করতে হবে। তথ্যের
প্রেক্ষিতে করণীয় সমাধান চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে।
৫। ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে শুধু নিজে বিরত থাকলে চলবে না, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী, পরিচিতজনকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে তারা যেন এই মারাত্মক নেশা থেকে দূরে থাকে।
৬। মাদকদ্রব্য সেবনের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর দিক জেনে সবার উচিত এ থেকে নিজে মুক্ত থাকা, বন্ধু-বান্ধব ও অন্যদেরকে এর কবল থেকে মুক্ত থাকতে অর্থাৎ মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করা।
মাদকমুক্ত থাকার ক্ষেত্রে অন্যদের ভূমিকা : মাদকাসক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধবদের ক্ষতিকর প্রভাব বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। তবে সব বন্ধুই কি মাদকাসক্ত, নিশ্চয়ই না। দু'একজন হয়ত দুর্ভাগ্যক্রমে মাদকাসক্ত হয়, তবে বেশির ভাগ বন্ধুই ভালো হয়। এই ভালো বন্ধুরাই অন্য বন্ধুদেরকে মাদক গ্রহণ না করার জন্য প্রভাবিত করতে পারে। মাদকমুক্ত থাকার ক্ষেত্রে বন্ধু বা সমবয়সী ছাড়াও আরও অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- সন্তানের প্রতি অভিভাবকের সতর্ক দৃষ্টি সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে । এছাড়া মাদ্রাসার শিক্ষকের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষক আদর্শস্বরূপ। শিক্ষকের আদেশ ও উপদেশ শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে পালন করে। শ্রেণিকক্ষে বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষকের আদেশ ও উপদেশে শিক্ষার্থীরা মাদক পরিহার করে চলতে পারে। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরাও স্নেহ, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা দিয়ে ছেলেমেয়েদের মাদকমুক্ত থাকতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম যেমন- পত্র-পত্রিকা, রেডিও, টেলিভিশন মাদক বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে। এর বাইরে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা যায় ।
কাজ-১ : মাদকদ্রব্য গ্রহণের এমন ৪টি কুফল লিখ যা ভাবলে তুমি কখনো ধূমপান ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতে পারবে না । কাজ-২ : তোমাদের মাদ্রাসাকে ধূমপানমুক্ত রাখার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে? লেখ। |